বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-এর টেকনাফ ব্যাটালিয়ন কর্তৃক পরিচালিত পৃথক পাঁচটি অভিযানে ১.৩১৩ কেজি ক্রিস্টাল মেথ আইস, ১০,০০০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, ২৫০ গ্রাম গাঁজা, ১৪ ক্যান বিয়ার, ৫০ সিএফটি কাঠ এবং আমদানী নিষিদ্ধ অন্যান্য বার্মিজ মালামালসহ একজন চোরাকারবারি আটক।
বর্তমান সরকারের মাদক ও চোরাচালানের বিরুদ্ধে 'জিরো টলারেন্স' নীতি যথাযথ বাস্তবায়নকল্পে মাঠ পর্যায়ে বিজিবি'র অভিযানিক কর্মকাণ্ড এবং গোয়েন্দা তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় অদ্য ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ তারিখে বিজিবি'র টেকনাফ ব্যাটালিয়ন (২ বিজিবি) তার দায়িত্বপূর্ণ সীমান্ত এলাকায় পাঁচটি পৃথক অভিযান পরিচালনা করে ১.৩১৩ কেজি ক্রিস্টাল মেথ আইস, ১০,০০০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, ২৫০ গ্রাম গাঁজা, ১৪ ক্যান বিয়ার, ৫০ সিএফটি কাঠ এবং আমদানী নিষিদ্ধ অন্যান্য বার্মিজ মালামালসহ একজন চোরাকারবারিকে আটক করতে সক্ষম হয়েছে।
অভিযান-১।
বিএসবি এর ব্যুরো সদর (NTMC) এর তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায় যে, টেকনাফ ব্যাটালিয়ন (২ বিজিবি) এর অধীনস্থ দমদমিয়া বিওপি’র বিপরীতে নাফ নদীতে মায়ানমারের অভ্যন্তরে অবস্থিত লালদ্বীপ নামক স্থান হতে মাদক পাচারকারী এবং চোরাকারবারীরা নৌকা যোগে মাদক এবং আমদানি নিষিদ্ধ রীচ কফি বাংলাদেশে পাচার করতে পারে। উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ তারিখ রাত থেকেই অধীনস্থ সকল নৌ টহলকে সর্বোচ্চ সর্তক অবস্থায় রাখা হয় এবং ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ তারিখে পূনরায় বিএসবি এর ব্যুরো সদর (NTMC) থেকে তথ্য নিশ্চিত করা হয় যে, উক্ত মালামালগুলো নাফ নদী পার করে অত্র ব্যাটালিয়নের অধীনস্থ দমদমিয়া বিওপি’র দায়িত্বপূর্ণ বিআরএম-১০ হতে আনুমানিক ৯০০ গজ উত্তর-পূর্ব দিকে জাদিমোড়া শরনার্থী ক্যাম্পের পার্শ্বে জনৈক জসিমের বাড়ির সামনে কেওড়া বাগানে পাচারের উদ্দেশ্যে নাফ নদীর কিনারায় লুকায়িত অবস্থায় রাখা হচ্ছে। বর্ণিত তথ্যটি পাওয়ার সাথে সাথে দমদমিয়া বিওপি’র সকল নৌ টহলদলকে উক্ত এলাকায় প্রেরণ করা হয়। আনুমানিক ১৪১৫ ঘটিকায় নৌ টহলদল বর্ণিত স্থানের পার্শ্বে একজন ব্যক্তিকে পানির মধ্যে নৌকা হতে কিছু বস্তা নামিয়ে লুকানোর প্রচেষ্টারত অবস্থায় দেখতে পায়। বিজিবি টহলদল তাকে সাথে সাথে চ্যালেঞ্জ করে তাকে আটক করার চেষ্টা করলে উক্ত ব্যক্তি তার হাতে থাকা রামদা দিয়ে বিজিবি টহলদলের উপরে আক্রমন করে। এসময় টহলদলের অন্যান্য সদস্যরা উক্ত ব্যক্তিকে ধরে ফেলে এবং ঘটনাস্থল হতে তথ্য মোতাবেক আমদানি নিষিদ্ধ ৩৫০ প্যাকেট রীচ কফি, ২০ প্যাকেট রয়েল-ডি, ১টি কাঠের নৌকা এবং ১টি রামদা জব্দ করে। আটককৃত ব্যক্তির পরিচয়- তাহের রহমান (২৪), পিতা-নবী আহম্মেদ, গ্রাম-মোচনী, ডাকঘর-হ্নীলা, থানা-টেকনাফ, জেলা-কক্সবাজার বলে জানা যায়। পরবর্তীতে তাকে মাদকের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে সে স্বীকার করে যে, মাদকগুলো যে স্থানে নৌকা ছিল সেই এলাকায় কেওড়া বাগানের ভিতরে লুকায়িত রয়েছে। পরবর্তীতে অধিনায়কের দিকনির্দেশনায় ব্যাটালিয়ন সদর হতে ভারপ্রাপ্ত অপারেশন অফিসার এর নেতৃত্বে একটি বিশেষ টহলদল বর্ণিত এলাকায় প্রেরণ করা হয় এবং উক্ত এলাকায় তল্লাশী অভিযান পরিচালনা করা হয়। ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ তারিখ রাতে তল্লাশী অভিযান পরিচালনাকালে আটককৃত চোরাকারবারীর দেখানো স্থান থেকে ১.৩১৩ কেজি ক্রিস্টাল মেথ আইস এবং ১০,০০০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।
উল্লেখ্য, উদ্ধারকৃত আমদানি নিষিদ্ধ রীচ কফি, রয়েল-ডি, কাঠ, স্যান্ডেল, ক্রীম, কারেন্ট জাল, থামি এবং কাঠের নৌকা টেকনাফ শুল্ক গুদামে জমা করতঃ আটককৃত চোরাকারবারিকে জব্দকৃত ক্রিস্টাল মেথ আইস, ইয়াবা ট্যাবলেট এবং রামদাসহ নিয়মিত মামলার মাধ্যমে টেকনাফ মডেল থানায় হস্তান্তর করার কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
অভিযান-২।
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ তারিখ সকালে অত্র ব্যাটালিয়নের অধীনস্থ সাবরাং বিওপি’র একটি সীমান্ত সুরক্ষা টহলদল বিআরএম-৫ হতে আনুমানিক ৭০০ গজ দক্ষিণ দিকে আচারবুনিয়া নামক স্থানে নিয়মিত টহল কার্যক্রম পরিচালনা করছিল। উক্ত সময় টহলদল দুইজন ব্যক্তিকে নাফ নদী পার হয়ে বস্তা কাঁধে নিয়ে সীমান্ত শূন্য লাইন হতে আনুমানিক ৩৫০ গজ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে (জিআর-৪২০২৪৮ এমএস-৮৪ সি/৪) বেড়ীবাঁধের দিকে আসতে দেখে এবং তাদের গতিবিধি সন্দেহজনক হওয়ায় টহলদল তাদের চ্যালেঞ্জ করে। উক্ত ব্যক্তিরা দুর হতে বিজিবি টহলদলের উপস্থিতি অনুধাবন করা মাত্রই তাদের কাঁধে থাকা বস্তাগুলো ফেলে দ্রুত দৌঁড়ে কেওড়া বাগানের ভিতর দিয়ে নাফ নদীতে লাফ দিয়ে মায়ানমারের দিকে পালিয়ে যায়। টহলদল উল্লেখিত স্থানে পৌঁছে তল্লাশী অভিযান পরিচালনা করে ২টি প্লাষ্টিকের বস্তার ভিতর হতে ১৪ ক্যান বার্মিজ বিয়ার, ৫ কেজি কারেন্ট জাল, ১০পিস থামি এবং ২পিস কামিজ (মালিকবিহীন অবস্থায়) জব্দ করে।
অভিযান-৩।
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ তারিখ সকালে হোয়াইক্যং বিওপি’র একটি সীমান্ত সুরক্ষা টহলদল বিআরএম-১৮ হতে আনুমানিক ০২ কিঃমি উত্তরে ক্যারাঙ্গাঘোনা খালের পাশে নিয়মিত টহল কার্যক্রম পরিচালনা করছিল। এ সময় টহলদল সীমান্তের শূন্য লাইন হতে ২০০ গজ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে (জিআর-২৮৩৩৮২ এমএস-৮৪ সি/৪) ক্যারাঙ্গাঘোনা খালের পাশে পরিত্যক্ত অবস্থায় ০১টি প্লাষ্টিকের বস্তা দেখতে পায়। টহলদলের সন্দেহ হওয়ায় তাৎক্ষণিকভাবে উক্ত বস্তাটি তল্লাশী করে বস্তার ভিতর হতে ১০ জোড়া বার্মিজ স্যান্ডেল এবং ১২০ পিস ক্রিম (মালিকবিহীন অস্থায়) উদ্ধার করা হয়।
অভিযান-৪।
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ তারিখ সকালে অধীনস্থ শাহপরীরদ্বীপ বিওপি’র একটি সীমান্ত সুরক্ষা টহলদল বিআরএম-৩ হতে আনুমানিক ৩ কিঃ মিঃ দক্ষিণ-পূর্ব দিকে ফিশারিঘাট নামক এলাকায় নিয়মিত টহল কার্যক্রম পরিচালনা করছিল। উক্ত সময় টহলদল বঙ্গোপসাগরের কিনারায় বালুর নীচে ঢাকা অবস্থায় কিছু কাঠ দেখতে পায়। পরবর্তীতে টহলদল কর্তৃক উক্ত স্থানে বালুর নীচ হতে ৫ পিচ গর্জন কাঠ (৫০ সিএফটি) পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।
অভিযান-৫।
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ তারিখ অধীনস্থ দমদমিয়া বিওপি’র একটি টহলদল দমদমিয়া চেকপোস্টে নিয়মিত যানবাহন তল্লাশী কার্যক্রম পরিচালনা করছিল। আনুমানিক ২০০০ ঘটিকায় টেকনাফ হতে ঢাকাগামী একটি বাস (পালকী) চেকপোস্টে আসলে তা তল্লাশীর জন্য থামানো হয়। পরবর্তীতে উক্ত বাসটি তল্লাশীকালীন পিছনের সীটের নীচে পরিত্যাক্ত অবস্থায় একটি কালো পলিথিনের ব্যাগ উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত ব্যাগটি খুলে ব্যাগের ভিতর হতে ২৫০ গ্রাম গাঁজা (মালিকবিহীন অবস্থায়) জব্দ করতে সক্ষম হয়েছে।